Friday, April 3, 2015
প্রযুক্তির বিকাশে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
প্রযুক্তির আজকের বিকাশের পেছনে রয়েছে অনেক বিজ্ঞানী, ভিশনারি, প্রকৌশলী, এবং নির্মাতাদের অবদান। তারসহ এবং তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা, কম্পিউটারের গণনা ক্ষমতার বৃদ্ধি এবং মাইক্রোইলেকট্রনিক্সের বিকাশ বর্তমান আইসিটিকে মুঠোর মধ্যে নিয়ে এসেছে।
আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ বা প্রচলন শুরু হয় চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage) [১৭৯১-১৮৭১] নামে একজন ইংরেজ প্রকৌশলী ও গনিতবিদের হাতে। অনেকে তাকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলে থাকেন। তিনি তৈরি করেন ডিফারেনস ইঞ্জিন ও এনালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামে দুইটি গণনা যন্ত্র। এই ইঞ্জিনগুলো যান্ত্রিকভাবে গণনা করতে পারে। ১৯৯১ সালে লন্ডনের বিজ্ঞান জাদুঘরে চার্লস ব্যাবেজের বর্ণনা অনুসারে একটি ইঞ্জিন তৈরি করা হয় এবং দেখা যায় যে, সেটি সঠিকভাবেই কাজ করছে। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, চার্লসের দুটি ইঞ্জিনই গণনার কাজ করতে পারত।
তবে গণনার কাজটি কিভাবে আরো কার্যকর করা যায় সেটি নিয়ে ভেবেছিলেন কবি লর্ড বায়রনের কন্যা অ্যাডা লাভলেস (Ada Lovelace) [১৮১৫-১৮৫২]। মায়ের কারণে অ্যাডা ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞান এবং গনিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৮৩৩ সালে চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে তার পরিচয় হলে তিনি ব্যাবেজের এনালিটিক্যাল ইঞ্জিনকে কাজে লাগানোর জন্য প্রোগ্রামিং -এর ধারণা সামনে নিয়ে আসেন। এ কারণে অ্যাডা লাভলেসকে প্রোগ্রামিং ধারণার প্রবর্তক হিসেবে সম্মনিত করা হয়। ১৮৪২ সালে ব্যাবেজ তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ইঞ্জিন সম্পর্কে বক্তব্য দেন। সে সময় অ্যাডা ব্যাবেজের সহায়তা নিয়ে পুরো বক্তব্যের সঙ্গে ইঞ্জিনের কাজের ধারাটি বর্ণনা করেন। কাজের ধারা বর্ণনা করার সময় তিনি এটিকে ধাপ অনুসারে ক্রমাঙ্কিত করেন। অ্যাডা মৃত্যুর ১০০ বছর পর ১৯৫৩ সালে সেই নোট আবার প্রকাশিত হলে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, অ্যাডা অ্যালগরিদম প্রোগ্রামিংয়ের ধারণাটাই আসলে প্রকাশ করেছিলেন।
ব্যাবেজ আর অ্যাডার এই কার্যক্রমের পাশাপাশি সে সময় পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়। বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (James Clerk Maxwell) [১৮৩১-১৮৭৯] তড়িৎ ও চৌম্বক বলকে একত্র করে তড়িৎ চৌম্বকীয় বলের ধারণা প্রকাশ করেন, যা বিনা তারে বার্তা প্রেরণের একটি সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। ম্যাক্সওয়েলের মৃত্যুর বছরে জন্ম বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের (১৮৭৯-১৯৫৫)।
বিনা তারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বার্তা প্রেরণে প্রথম সফল হন বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু (Jagadish Chandra Bose) [১৮৫৮-১৯৩৭]। ১৮৯৫ সালে তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ ব্যবহার করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তথ্য প্রেরণে সফল হন।
তবে, বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে একই কাজে সফল হন ইতালির বিজ্ঞানী গুগলিয়েলমো মার্কিন [১৮৭৪-১৯৩৭]। এ জন্য তাকে বেতার যন্ত্রের আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বিশ শতকে ইলেকট্রনিক্সের বিকাশের পর প্রথমে আইবিএম কোম্পানি মেইনফ্রেম কম্পিউটার তৈরি করে… পর্যায়ক্রমে ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কৃত হলে সাশ্রয়ী কম্পিউটার তৈরির পথ সুগম হয়। বিশ শতকে ষাট-সত্তরের দশকে ইন্টারনেট প্রটোকল (Internet Protocol) ব্যবহার করে আরপানেটের (Arpanet) জন্ম হয়। বলা যায়, তখন থেকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কম্পিউটারসমূহের মধ্যে আন্তঃসংযোগ বিকাশিত হতে শুরু করে। আর এ বিকাশের ফলে তৈরি হয় ইন্টারনেট। ১৯৭১ সালে আরপানেটে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে পাত্রালাপের সূচনা করেন আমেরিকার প্রোগ্রামার রেমন্ড স্যামুয়েল টমলিওনসন। তিনিই প্রথম ই-মেইল সিস্টেম চালু করেন।
মাইক্রোপ্রসেসরের আবির্ভাবের প্র বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সেটি ব্যবহার করে পার্সোনাল কম্পিউটার তৈরির কাজ শুরু হয়। স্টিভ জবস [১৯৫৫-২০১১] ও তার দুই বন্ধু স্টিভ জজনিয়াক ও রোনাল্ড ওয়েন ১৯৭৬ সালে ১লা এপ্রিল অ্যাপল কম্পিউটার নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। অ্যাপল হাতেই পার্সোনাল কম্পিউটারের নানান পর্যায় বিকশিত হয়েছে।
অন্যদিকে ১৯৮১ সালে আইবিএম কোম্পানি তাদের বানানো পার্সোনাল কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার জন্য তৃতীয় উইলিয়াম হেনরি বিল গেটস [১৯৫৫] ও তাঁর বন্ধুদের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটকে দায়িত্ব দেয়। বিকাশিত হয় এমএস ডস এবং উইন্ডোজ। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ কম্পিউটার পরিচালিত হয় বিল গেটস প্রতিষ্ঠিত মাইক্রোসফট কোম্পানির অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার দিয়ে।
ইন্টারনেটের বিকাশকালে ১৯৮৯ সালে একজন ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল (Http) ব্যবহার করে তথ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। সেই থেকে স্যার টিমোথি জন টিম বার্নাস-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (WWW) জনক হিসেবে পরিচিত। নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির বিকাশের ফলে বিশ্বের নানান দেশের মধ্যে ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং বিকশিত হয় বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশান সফটওইয়্যার।
বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম ফেসবুক। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মার্ক জাকারবার্গ (১৯৮৪) ও তাঁর চার বন্ধুর হাতে সূচিত হয় ফেসবুকের। শুরুতে এটি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবদ্ধ থাকলেও মে ২০১৪-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ১১৯ কোটি ব্যবহারকারী ফেসবুক ব্যবহার করেন। এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আমাদের বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এখন ফেসবুক ব্যবহার করে।
















0 comments:
Post a Comment
Contract: Mob:01977558889,01930960310 Email: juwelbdonline@gmail.com